‘নিপা ভাইরাস নিয়ে কোনো আতঙ্ক না, খেজুরের রস পানে দরকার সতর্কতা’ এই স্লোগানে খুলনা অঞ্চলে প্রচারণা চালাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ অঞ্চলে গত এক বছরে নিপা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রচারণার সুফল এটি।
খেজুরের কাঁচা রস পান না করে রস ফুটিয়ে খেতে বলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের প্রচারণার সাথে একমত পোষণ করেছে কৃষি বিভাগও। সরকারের এ বিভাগটি বলছে গাছ কাটা থেকে রস নামানো পর্যন্ত গাছের নির্দিষ্ট স্থানটি ছোবড়া দিয়ে ঢেকে রাখার কথা। আর গাছের মাথায় রস নামানোর জন্য দেয়া নালি অনেকটা নিচে নামিয়ে দেয়ার পরামর্শও দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুলনার বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের নালিটি অনেকটা নিচে নামিয়ে দিচ্ছেন গাছিরা (খেজুর গাছ থেকে গুড় সংগ্রাহক)। আবার গাছ কাটার পর ছোবড়া দিয়ে ঢেকে দেয়া হচ্ছে। যাতে করে রাতের বেলা বাদুর এসে নালি বা হাঁড়ির মুখে বসতে না পারে। এর ফলে গাছে বাদুর বসতে পারছে না, যা নিপা ভাইরাস প্রতিরোধে সহায়কও হচ্ছে।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ‘খুলনায় খেজুরের রসের পর্যাপ্ত জোগান রয়েছে। এখানকার কাঁচা রস ভাড় ভরে বিক্রি করা হয়। সাধারণ মানুষ যা বেশ আগ্রহ নিয়েই বিক্রি করে থাকেন। স্বাস্থ্য বিভাগের তিনশ কর্মী উপজেলা সদর ও তৃণমূলের জনসচেনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছেন। তারা কাঁচা রস পান না করে ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর খুলনায় এখন পর্যন্ত নিপা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে।’
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় ৩২৪ হেক্টর জমিতে খেজুর গাছ রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ জেলায় নতুনভাবে ২১ হাজার ২৫০টি খেজুর গাছ লাগানো হয়েছে। এ অর্থবছরে সাড়ে ১৮ হাজার খেজুর গাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি গাছ লাগানো সম্ভব হয়েছে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সেনপাড়ার গাছি নুরু শেখ জানান, তিনি দিনে ৩০-৩৫টি গাছ কাটতে পারেন। টাকার বিনিময়ে তিনি এ কাজ করেন। তিনি সপ্তাহে ২ দিন কিছু গাছ কাটেন, যা থেকে রসের অর্ধেকটা তিনি পান। গাছ কাটা থেকে তিনি যা আয় করেন তা দিয়ে তার সংসার ভালোই চলে যায়।
তিনি বলেন, ‘আগে তো এ ধরনের ভাইরাস নিয়ে কোনো কথা শুনিনি। বাপ দাদার পেশা ছিল গাছ কাটা। আমি তাই করছি। তবে এবার কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী, গাছ কাটার পর ছোবড়া দিয়ে ঢেকে দিচ্ছি। যাতে করে রাতের বেলা বাদুর এসে নালি বা হাড়ির মুখে বসতে না পারে। আর গাছের ওপরের কাটা স্থানটিও ঢেকে রাখার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রসের বেশ চাহিদা রয়েছে। একদিন আগেই রস বিক্রি হয়ে যায়। লোকজন রস নেয়ার জন্য আগেই টাকা জমা দিয়ে রাখে।’
ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘তার উপজেলায় ৪ লাখ ১৬ হাজার ৯২৫টি খেজুর গাছ রয়েছে। মৌসুমে প্রতি গাছ থেকে ১০ ভাড় করে রস পাওয়া যায়। যা থেকে গড়ে আড়াই কেজি হারে গুড় পাওয়া যায়।’
‘নিপা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেনতার বিকল্প নেই। গাছ কাটার পর যাতে বাদুর বসতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে গাছের মাথা থেকেও বেশ খানিকটা নিচে নালি টেনে নামানোর জন্য বলা হয়েছে। আর নালি বা ভাড়ের মুখে যাতে বাদুর বসতে না পারে সে জন্য ছোবড়া দিয়ে ঢেকে রাখার জন্য বলা হচ্ছে। সর্বোপরি রস ফুটিয়ে পান করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, ‘নিপা ভাইরাস প্রতিরোধে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন। খেজুরের রস কাঁচা না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. ফেরদৌসী আক্তার বলেন, ‘গত এক বছরে খুলনা অঞ্চলে কোনো নিপা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগ এ ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে।’